এবার আর দেশে নয়, আমাদের পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গিয়েছিলাম ২০২৪ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় এবং এটা ছিল আমার SOLO TRAVELING। আমার এই ভ্রমণ গল্পে আমি কিভাবে বাংলাদেশ থেকে আগরতলায় গেলাম, কোথায় ঘুরেছি, কোথায় কেনাকাটা করেছি ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ থেকে আগরতলা ভ্রমণের ব্যাপারে বিভিন্ন সাজেশন যা আপনাদের উপকারে আসবে বলে আমি আশা করছি। তাহলে শুরু করা যাক আমার একাকী আগরতলা ভ্রমণ গল্প:
আমি ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ভোর ৬:৩০ মিনিটে রওনা করি আজমপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ৭-৮ দিন আগেই ট্রেনের শোভন চেয়ারের ঢাকা থেকে আজমপুরের টিকিট কেটেছিলাম, ভাড়া ছিল ১৮৫ টাকা। আপনারা চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সকাল ৭ঃ৪৫ মিনিটের মহানগর প্রভাতী ট্রেনে করেও আখাউড়া যেতে পারেন।
ট্রেন সকাল ৯.১০ মিনিটে আজমপুর স্টেশনে থামে। আমার প্লান ছিল খরচ কমানোর জন্য শেয়ারে কোন CNG তে করে আখাউড়া চেকপোষ্টে যাওয়া। শুরুতে সেই রকম সিএনজি না পেলেও একটু ঘুরাঘুরি করে ৫০ টাকা ভাড়ায় শেয়ারে একটা সিএনজি। গ্রামীণ রাস্তা ও প্রকৃতি দেখতে দেখতে ২০ মিনিটেই পৌছে যাই আখাউড়া চেকপোষ্টে। সিএনজি থেকে নেমে চিন্তা করলাম TRAVEL TAX দিয়ে দেই। LAND CUSTOM STATION গেট দিয়ে ঢুকে সোনালী ব্যাংকের বুথে ১,০০০ টাকা TRAVEL TAX জমা দেই, সময় লেগেছিল মাত্র ৫-৭ মিনিট।
যেহেতু খুব ভোরে রওনা করেছিলাম, তাই সকালের নাস্তা করা হয় নাই। চিন্তা করলাম বাংলাদেশ থেকেই সকালের খাবার খেয়ে নেই। এখানকার খাবার হোটেলগুলোতে রুটি বা পরোটা পাওয়া যায় না। স্থলবন্দরের ২য় গেটের উল্টোপাশের “মায়ের দোয়া” হোটেলে ডিম ভাজা, আলু ভর্তা ও ডাল দিয়ে ভাত খাই। মূল্য ছিল ৫০ টাকা। গরমের জার্নিতে পরোটার চেয়ে ডাল-ভাত খেয়েই ভালো লেগেছিল।
এরপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করি। বাংলাদেশ প্রান্তে কিছুটা সময়
লেগেছিল কিন্তু ভারত প্রান্তে স্বল্প সময়েই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়েছিল।
আগরতলা প্রান্তে পৌঁছেই গরমটা যেন বেশি লাগছিল। ইমিগ্রেশন গেট থেকে বের
হলেই STATE BANK OF INDIA এর ATM BOOTH দেখতে পাবেন। যারা ইন্টারন্যাশনাল
কার্ড নিয়ে যাবেন, তারা এখান থেকেই রুপি নিতে পারবেন। আমি বর্ডার বাজারের
এক মুদি দোকান থেকে টাকা থেকে রুপি করি, CONVERSATION RATE ছিল ৬৭.২০
পয়সা, আর শহরের রেট ছিল ৬৭.৬০ পয়সা যা ভারতের অন্যান্য স্থল বন্দর থেকে
খুবই কম।
আমার পরিকল্পনা ছিল কামান চৌমুহনী যাওয়ার। লোকাল একজন বললো রিক্সা ভাড়া ৩০ রুপি নিবে কিন্তু আমি যেহেতু বাইরের লোক তাই রিক্সাওয়ালারা আমার কাছে ৫০ রুপি চাচ্ছিল। তাই আমি বর্ডার থেকে অটোতে করে বটতলা আসি ১০ রুপি দিয়ে এবং বটতলা থেকে আরেক অটোতে করে কামান চৌমুহনী আসি ১০ রুপী দিয়ে। সময় লেগেছিল সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট।
দুপুরের খাবার শেষে আগরতলা ঘুরার উদ্দেশ্যে বের হই। আমার পরিকল্পনা ছিল প্রথম দিন উজয়ন্ত প্যালেস এবং হেরিটেজ পার্ক ঘুরবো আর দ্বিতীয় দিন নীর মহল, সিপাহী জেলা চিড়িয়াখানা এবং সাইন্স সিটি ঘুরতে যাবো।
লোকাল লোকদের জিজ্ঞেস করলাম উজয়ন্ত প্যালেস কিভাবে যেতে পারি, বললো কিছুটা হাঁটলেই উজয়ন্ত প্যালেস বা রাজবাড়ী। আসলেই কামান চৌমুহনীর পাশেই উজয়ন্ত প্যালেস। অত্যাধিক গরমে আস্তে আস্তে হেঁটে উজয়ন্ত প্যালেস পৌঁছাই, দেখলাম এখানে ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যায়। তাই শুরুতে হেরিটেজ পার্ক ঘুরে শেষ বিকেলে উজয়ন্ত প্যালেস ঘুরার প্লান করলাম। উজয়ন্ত প্যালেসের সামনে থেকে ৫০ রুপি রিকশা ভাড়ায় রওনা করলাম হেরিটেজ পার্কের উদ্দেশ্যে। আগরতলা এবং আমাদের বাংলাদেশের রিক্সার স্ট্রাকচার একই, কিন্তু ওদের রিক্সার সিটটা বেশ আরামদায়ক।
দ্বিতীয় দিনের পরিকল্পনা ছিল শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে
নীর মহলে ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু গরমে এত দূরে যেয়ে পোষাবে না, আর খোঁজ
নিয়ে জেনেছিলাম নীর মহলের আশেপাশে এখন পানিও নেই। তাই দ্বিতীয় দিনেই
কেনাকাটা সেরে বাংলাদেশে ফেরার পরিকল্পনা করলাম। দ্বিতীয় দিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকাল ৯ঃ০০ টায় গেলাম MOM’S KITCHEN এ নাস্তা করতে। অনেকদিন পর লাল আটার রুটি তৃপ্তি দিয়ে খেয়ে চলে গেলাম পোস্ট অফিস চৌমুহনীর পাশে SMART BAZAR এবং BAZAR KOLKATA এর শোরুমে। সকাল ১০টা বাজে এই শোরুমগুলো উন্মুক্ত হয়। SMART BAZAR থেকে UNIBEC এর চকলেট বিস্কুট অবশ্যই কিনতেই হবে। এবার BAZAR KOLKATA থেকে আরো কিছু শপিং করে SMART BAZAR এর সামনে থেকে রিক্সায় রওনা করলাম চকলেট-মসলার পাইকারি বাজার গোলবাজারের উদ্দেশ্যে। রিক্সা ভাড়া নিয়েছিল ২০ রুপি। আপনি চাইলে হেটেও যেতে পারেন, গোলবাজার হেটে যেতে ৮-১০ মিনিট সময় লাগবে। গোলবাজার থেকে আপনি বিভিন্ন মসলা, চকলেট, সাবান, শ্যাম্পু কম দামে কিনতে পারবেন। আমি “লোকনাথ ট্রেডিং কোম্পানি” নামের এক দোকান থেকে কেনাকাটা করেছিলাম।
এরপর হোটেলে পৌঁছে ব্যাগ গুছিয়ে রওনা করি চেকপোষ্টের উদ্দেশ্যে। আসার সময় ১০-১৫ মিনিটেই ইমিগ্রেশন এর সব কাজ সম্পন্ন করে বাংলাদেশে চলে আসি।
বাংলাদেশ থেকে আগরতলা ভ্রমণের ব্যাপারে বিভিন্ন সাজেশন:
এই ছিল আমার এক রাত দুই দিনের একাকী আগরতলা ভ্রমণের গল্প। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন সবাই আল্লাহ হাফেজ।