Narail

নড়াইল জেলার ভ্রমণ বৃত্তান্ত

“দেখব পৃথিবী ঘুরবো বেশ
কিন্তু সবার আগে আমার দেশ, বাংলাদেশ।”
বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে ভ্রমণের ধারাবাহিকতায় আমার এবারের গন্তব্য ছিল নড়াইল জেলা। নড়াইল জেলা বলতেই আমরা বুঝি আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফি বিন মর্তুজার গ্রামের বাড়ি যিনি বর্তমানে এই জেলার সংসদ সদস্য ও। তাছাড়াও নড়াইল জেলায় রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের বাড়ি, কবর ও স্মৃতি সংগ্রহশালা, চিত্রা নদীর পাড়ে বান্দা জমিদার ঘাট, ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং নিরিবিলি পিকনিক স্পট।

নড়াইল ভ্রমণ শুরু করেছিলাম বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের বাড়ি থেকে যা নড়াইল শহরেই অবস্থিত। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান তার তৈলচিত্র শিল্পে গ্রাম-বাংলা, কৃষক, নারী, গাছপালা এমনকি গবাদিপশুর ছবিও ফুটিয়ে তুলেছেন। বাংলার কৃষক এবং নারীরা সব সময়ই অবহেলিত এবং দুর্বল ছিল। আমার মনে হয়েছে শিল্পী বাংলার অর্থনীতিতে তাদের অবদানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছেন। তাইতো শিল্পী তার চিত্রকল্পে বলশালী পুরুষ এবং স্বাস্থ্যবতী নারীর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। চিত্রশিল্পীর হাতে আঁকা ছবিগুলি দেখতে পাবেন তার স্মৃতি সংগ্রহশালায়। শিল্পীর ব্যবহৃত পোশাক, তৈজসপত্রও সংরক্ষিত আছে স্মৃতি সংগ্রহশালায়।

এসএম সুলতানের চিত্রকল্প,নড়াইল
এসএম সুলতানের চিত্রকল্প,নড়াইল

শিল্পীর পুরো বাড়িটি বিভিন্ন রকমের গাছপালায় ঘেরা যা একজন ভ্রমণপিপাসুর মন সহজেই ভালো করে দিতে বাধ্য। বাড়ির পাশেই রয়েছে শিল্পীর ব্যবহৃত একটি বজরা। লোকমুখে শোনা যায়, শিল্পী এই বজরায় চড়েই চিত্রা নদীতে ভ্রমণ করতেন। গাছপালা ঘেরা এই বাড়িতেই শায়িত রয়েছেন আমাদের বাংলার গর্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান।

এসএম সুলতানের বাড়ি, নড়াইল

আমার পরবর্তী গন্তব্য ছিল চিত্রা নদীর পাড়ে বান্ধা জমিদার ঘাট। শিল্পী এস এম সুলতানের বাড়ি থেকে রুপগঞ্জ আসার পথেই ডানদিকে দেখতে পাবেন ঘাটটি। ঘাটটি কোন জমিদার নির্মাণ করেন তার কোনো হদিস না মিললেও রোমান স্থাপত্যের আদলে নির্মিত ঘাটতি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ঘাটে বসে উপভোগ করতে পারবেন চিত্রা নদীর সৌন্দর্য।

বান্ধা জমিদার ঘাট, নড়াইল

এবারের গন্তব্য প্রাচীন ভিক্টোরিয়া কলেজে, ১৮৮৬ সালে জমিদার রতন রায়ের পুত্র চন্দ্র রায় ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তৎকালীন খুলনা-বরিশাল এবং ফরিদপুরের প্রথম উচ্চশিক্ষার কলেজ ছিল এটি। কলেজটিতে এখনো প্রাচীনকালের কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করা যায়।

ভিক্টোরিয়া কলেজ, নড়াইল
সময়ের অভাবে নড়াইল সফর এখানেই শেষ করে ঢাকায় ফিরতে হয়েছিল কিন্তু হাতে সময় থাকলে আপনারা ঘুরে আসতে পারেন নিরিবিলি পিকনিক স্পটে যা নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার লক্ষীপাশা্র অদূরে রামপুর নামক স্থানে অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন: ঢাকার কল্যাণপুর থেকে সরাসরি নড়াইলের উদ্দেশ্যে ঈগল এবং একে ট্রাভেলস পরিবহনের বাস চলাচল করে। ভাড়া: ৫০০/-
বিকল্প পথেও মাওয়া দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে কাঠালবাড়ি থেকে খানজাহান আলী পরিবহনে করে স্বল্প সময়ে নড়াইল যেতে পারবেন। কাঠালবাড়ি থেকে নড়াইলের ভাড়া ১২০/-
কোথায় থাকবেন: হোটেল চিত্রা অথবা নড়াইল গেস্ট হাউসে রাত্রি যাপন করতে পারবেন, ভাড়া ৪০০-৫০০/- প্রতি রাত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *