মাগুরা জেলার ভ্রমণ কথন

“দেখব পৃথিবী ঘুরবো বেশ
কিন্তু সবার আগে আমার দেশ, বাংলাদেশ।”
বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে ঘুরার ধারাবাহিকতায় এবারের ভ্রমণ ছিল মাগুরা জেলায়। গত ১৬ ই অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার সারাদিন ঝিনাইদহ জেলায় ঘুরেছি আর ১৭ ই অক্টোবর শনিবার গিয়েছিলাম মাগুরা জেলা ভ্রমণে। ঝিনাইদহ শহরে সফরসঙ্গী থাকলেও মাগুরা ভ্রমণে কোন সফরসঙ্গী নেই। কেন যেন আমার একাকী ভ্রমণ খারাপ লাগেনা বরং ভালোই লাগে।
শুক্রবার রাতে ভ্রমণ সম্পর্কিত সোশ্যাল সাইটগুলো ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম মাগুরা জেলার মোহম্মদপুর উপজেলায় রয়েছে রাজা সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদ এবং মধুমতি নদী
শনিবার সকালে নাস্তা করে যশোরের নিউমার্কেট বাস স্ট্যান্ড থেকে মাগুরার বাসে করে চলে যাই মাগুরা শহরে, ভাড়া ৬৫ টাকা। সেখান থেকে ৫ টাকায় অটোতে করে ঢাকা মোড়, ঢাকা মোড় থেকেই মোহাম্মদপুরগামী বাস ছেড়ে যায়, ভাড়া ৪০ টাকা। মোহাম্মদপুর নেমে একটি হোটেলে সিঙ্গারা খেয়ে নেই এবং সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদ সম্পর্কে খোঁজ নেই। জানা গেল পায়ে হেঁটে প্রাসাদে যেতে ৭-৮ মিনিট লাগবে আর ভ্যানে গেলে ২ মিনিট। আমি ভ্যানে করেই রওয়ানা হই রাজা সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদের দিকে, ভাড়া ১০ টাকা। তখন সময় দুপুর ১২টা, রাজপ্রাসাদের ফটকে তালা। খোঁজ নিয়ে জানলাম দুপুর ২.৩০টার দিকে ফটক খোলা হবে।
রাজা সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদ
রাজা সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদ
রাজা সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদ
তাই সময় কাটানোর জন্য আরেকটি ভ্যানে করে চলে গেলাম পাশেই মধুমতি নদীর ব্রিজে। অল্প কয়েকদিন আগেই মধুমতি নদীর উপর ব্রিজটি নির্মিত হয়। একদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নীল আকাশ অন্যদিকে চকচকে নতুন ব্রিজ, সত্যিই দারুন লাগছিল। কিছু সময় ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। এরপর হাঁটতে-হাঁটতে ব্রিজের নিচে চলে এলাম, একটি কড়ই গাছের নিচে বসে নদী এবং ঐ পাড়ের সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলাম। ঝা ঝা রোদ, মৃদু বাতাস, বাতাসে কড়ই গাছের পাতার শব্দ এবং কিছু মরা পাতা ঝরে যাচ্ছে নদীতে। মুহূর্তটা সত্যিই অসাধারণ ছিল। এরকম পরিবেশে অজান্তেই মনের গহীনে বেজে ওঠে:
“বাড়ির পাশে মধুমতী, পুবাল হাওয়া বয়রে;
বন্ধু মনে রং লাগাইয়া, প্রানে দিলো জালারে।।”
মধুমতি নদী
মধুমতি ব্রিজ
মধুমতি নদী
কখন যে সময় ২.৪০টা হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। তাড়াতাড়ি করে মধুমতি নদীর সৌন্দর্য দেখা শেষ করে আবার পা বাড়ালাম রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে।
এইবার আর বৃথা হতে হলো না, ফটকের দরজা খোলা, ভেতরে একজন মহিলা ছিল। জানতে পারলাম এই মহিলা সহ আরো দুইজন এই রাজপ্রাসাদ দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। রাজপ্রাসাদটি আসলেই খুবই যত্ন সহকারে দেখভাল করা হয়। কোন ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়েনি। কিছু সময় রাজপ্রাসাদের চারিদিক এবং ছাদের উপরে ঘুরলাম। বের হওয়ার সময় রাজপ্রাসাদের পরিদর্শন বইতে মন্তব্য করে রওনা হলাম মোহাম্মদপুর বাজারের উদ্দেশ্যে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আমার মাগুরা ভ্রমন শেষ করলাম এবং যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
কিভাবে যাবেন: ঢাকার গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা,সাতক্ষীরা, বেনাপোলগামী হানিফ, সোহাগ, রয়েল পরিবহনে করে মাগুরা আসতে পারবেন, ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *