Sandwip

সন্দ্বীপ ভ্রমণের আদ্যোপান্ত

“দেখব পৃথিবী ঘুরব বেশ
কিন্তু সবার আগে আমার দেশ বাংলাদেশ”
অনেক দিনের শখ ছিল বাংলাদেশের প্রথম দ্বীপ সন্দ্বীপ ঘুরতে যাওয়া, হঠাৎ করেই অফিশিয়াল ট্রিপে সন্দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ হলে সাথে সাথেই আমি সেই সুযোগ লুফে নেই। অবশেষে ২০২১ সালের ০৯ ই জানুয়ারি ১ সপ্তাহের জন্য সন্দ্বীপে যাই।
এই ১ সপ্তাহে সন্দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি, বিভিন্ন রকম খাবার খেয়েছি, পাশাপাশি সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষের সাথেও মেশার সুযোগ হয়েছিল। সন্দ্বীপের মানুষজন খুবই আন্তরিক, আপনার যেকোন প্রয়োজনে তারা নির্দ্বিধায় এগিয়ে আসবে। আমার এই সন্দ্বীপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে আমি চেষ্টা করেছি সন্দ্বীপ ভ্রমণের বিস্তারিত তুলে ধরার:

কিভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে সন্দ্বীপ: ঢাকা থেকে সন্দ্বীপে যাবার জন্য আপনাকে সায়েদাবাদ / ফকিরাপুল হতে চট্টগ্রামগামী যেকোন বাসের টিকেট কেটে সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা নামক জায়গায় নামতে হবে। (নন-এসি যেকোনো বাসের ভাড়া ৪৮০ টাকা, এবং এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৭০০-১,০০০ টাকা) সবচেয়ে ভালো হয় যদি বাসের সুপারভাইজারকে বলে রাখেন যে আপনি সন্দ্বীপে যাবেন, তাহলে তারা আপনাকে ছোট কুমিরা অটো স্ট্যান্ডের সামনে নামাবে। ছোট কুমিরা থেকে অটোতে করে বড় কুমিরা ঘাটে যেতে হবে যেখান থেকে সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে স্পিডবোট ছেড়ে যায়। অটো ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা, রিজার্ভ নিলে ৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ: চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে আসার জন্য চট্টগ্রাম শহরের অলংকার বা এ কে খান মোড় থেকে “সেইফ লাইন সার্ভিস” বাসে করে কুমিরা ঘাটঘর রোডে আসতে হবে। ভাড়া নিবে ৩০-৩৫ টাকা অথবা নিউমার্কেট থেকে ৭ নম্বর বাসে করে কুমিরা ঘাটঘর আসতে পারবেন। ভাড়া ২৭ টাকা। কুমিরা ঘাটঘর থেকে অটোতে করে বড় কুমিরা ঘাটে আসতে হবে, ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা।
বড় কুমিরা ঘাট থেকে স্পিডবোটে করে সন্দ্বীপে যেতে হবে। সন্দ্বীপের ঘাটকে গুপ্তছড়া ঘাট বলা হয়। স্পিডবোট ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। যদি জোয়ারের সময় যান তাহলে টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকেই স্পীডবোটে উঠতে পারবেন। কিন্তু ভাটার সময় গেলে বড় কুমিরা ঘাটের লম্বা জেটি হেঁটে স্পিডবোটে উঠতে হবে। আর যদি হাটতে না চান তাহলে টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকেই ভ্যানে করে লম্বা জেটি পাড়ি দিয়ে স্পিডবোটে উঠতে পারবেন। ভ্যান ভাড়া রিজার্ভ ১০০ টাকা অথবা জনপ্রতি ২০ টাকা। স্পিডবোট দিয়ে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট।
গুপ্তছড়া ঘাটেও লম্বা জেটি রয়েছে। একই ভাবে হেঁটে বা ভ্যানে করে জেটির শেষমাথায় আসলেই সিএনজি বা মোটরবাইক পাবেন সন্দ্বীপের উপজেলা কমপ্লেক্সে যাওয়ার জন্য। গুপ্তছড়া ঘাট থেকে সন্দ্বীপের উপজেলা কমপ্লেক্সের ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন:

বর্তমানে সন্দ্বীপের উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। সেসব হোটেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত মানের হোটেল হলো “হোটেল রয়েল ইন” যা সন্দীপ টাওয়ারের ৫ম তলায় অবস্থিত। সিঙ্গেল রুম থেকে ডাবল রুম, এসি/নন-এসি সব রকমের রুম রয়েছে এই হোটেলে। সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা প্রতিদিন এবং ডাবল বেডের রুমের ভাড়া ১,০০০ – ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিদিন।
হোটেল রয়েল ইনের পাশেই রয়েছে “জামান গেস্ট হাউস“। এই গেস্ট হাউসের বাইরে খোলামেলা পরিবেশ রয়েছে কিন্তু ভিতরের পরিবেশ কিছুটা স্যাতস্যাতে ও কনজাস্টেড মনে হয়েছে। এই গেস্ট হাউসের নিচতলায় ও ২য় তলায় সিঙ্গেল ও ডাবল কিছু রুম রয়েছে। সিঙ্গেল রুম ৪০০ টাকা ও ডাবল রুমের ভাড়া ৮০০ টাকা প্রতিদিন।
একই এলাকায় রয়েছে “হোটেল গ্রীন ভিউ” নামক আরেকটি হোটেল। এই হোটেলের রুম গুলো সাধারণ মানের হলেও রুমে যথেষ্ট আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। শীতকালে এই হোটেলের রুমগুলোতে অবস্থান করে আরাম পাওয়া যাবে। সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা ও ডাবল বেডের রুমের ভাড়া ৮০০ টাকা।
যোগাযোগের জন্য মোবাইল নং:
হোটেল রয়েল ইন – ০১৮৭৪-৭৭৭৭৭৫
জামান গেস্ট হাউস:
মোঃ মোবারক: ০১৮৭৪-৯১৫১৭৪
মোঃ জুয়েল: ০১৮৯১-৬৪১৪৫৬
গ্রীন ভিউ হোটেল:
লিয়াকত আলী (হোটেলের মালিক): ০১৮১৫-১৯০৭০৭, ০১৭১২-৯৮৫৩০৯

কোথায় এবং কি খাবেন:

গ্রীন ভিউ হোটেলের বিল্ডিংয়েই রয়েছে একই মালিকের “গ্রীন চিলিজ রেস্টুরেন্ট“। এখানে বাংলা খাবারের পাশাপাশি চাইনিজ খাবার, স্যুপ, কাবাব আইটেম, বিভিন্ন রকমের জুস এবং কফি পাওয়া যায়।
গ্রীন ভিউ হোটেল এর পাশেই রয়েছে “ভাই ভাই হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট“। যেখানে আপনারা যেকোন ধরণের টাটকা বাংলা খাবার পাবেন। এই রেস্টুরেন্টের খাবারের মান খুবই ভাল।
তাছাড়াও জামান গেস্ট হাউজ এর বাইরে রয়েছে “জামান ফুড কর্ণার“। সেখানে বাংলা খাবারের পাশাপাশি কাবাব আইটেমের খাবারও পাবেন।

সন্দ্বীপের বিখ্যাত খাবার:

১. বিনয় শাহের মিষ্টি: সন্দ্বীপে গেলে অবশ্যই “বিনয় শাহের মিষ্টি” খেতে ভুলবেন না। বিনয় শাহের মিষ্টি খেতে হলে আপনাকে যেতে হবে শিবের হাট।
২. মহিষের দই: সন্দ্বীপের আরেকটি বিখ্যাত খাবার হলো মহিষের দই। এখানকার দই বাংলাদেশের অন্যান্য দই থেকে কিছুটা আলাদা। খেতে হালকা টক কিন্তু খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। ১ কেজি ভালো মানের মহিষের দইয়ের দাম পড়বে ৬০০ টাকা।
৩. খেজুরের রস: যদি শীতকালে সন্দ্বীপ যান তাহলে অবশ্যই খেজুরের রস খেয়ে আসবেন। আর যদি সুযোগ হয় তাহলে খেজুরের রসের পায়েস খেতে পারাটা আপনার সন্দীপ ভ্রমণের জন্য হবে বোনাস।

কোথায় ঘুরবেন:

অনেকেই ক্যাম্পিং করার জন্য সন্দ্বীপে আসেন। সন্দ্বীপের পশ্চীমপাড়ের রহমতপুর এলাকা ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ ও নিরাপদ জায়গা। এমনকি গ্রামবাসীও ক্যাম্পিং করার কাজে ভ্রমণকারীদের সাহায্য করে থাকেন।
তাছাড়াও কালাপানিয়া দীঘি, সবুজ চর, ছোয়াখালী এবং সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া জেটি ঘাট এলাকায়ও ঘুরতে যেতে পারেন।
সন্দ্বীপে ঘুরাঘুরির জন্য বাইক ভাড়া করে নেয়াটাই উত্তম, তাহলে কম সময়ে অনেক জায়গায় ঘুরা যায়। আমরা বাইকার মনসুর ভাইকে সাথে নিয়েছিলাম, খুবই ভালো মানুষ। অনেক জায়গায় নিজে থেকেই ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল, বাইকের ভাড়াও আমাদের কাছ থেকে তুলনামূলক কম নিয়েছিল।
মনসুর ভাইয়ের মোবাইল নং: ০১৮৩২-৯৯৪১৯৫, ০১৮১৩-৫১৬৩২৭
পরিশেষে বলতে চাই, অবকাশ যাপনের জন্য সন্দ্বীপ একটি আদর্শ জায়গা। এখানকার সরল-সহজ মানুষগুলোর আন্তরিকতা আমি চিরদিন মনে রাখবো এবং সময় ও সুযোগ হলে ইনশাল্লাহ আবারো সন্দ্বীপ ভ্রমণে যাব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *