“দেখব পৃথিবী ঘুরবো বেশ
কিন্তু সবার আগে আমার দেশ, বাংলাদেশ।”
বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে ঘুরার ধারাবাহিকতায় আমার এবারের ভ্রমণ ছিল ঝিনাইদহ জেলায়। অফিসের কাজে ২০২০ সালের ১০ই অক্টোবর ২ সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলাম যশোর। যেহেতু শুক্রবার ও শনিবার অফিস বন্ধ, তাই প্ল্যান করেছিলাম শুক্রবার ঝিনাইদহ জেলা ও শনিবার মাগুরা জেলা ভ্রমণ করার। যেই ভাবা সেই কাজ, ১৬ই অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার সকালে হোটেল থেকে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে যশোর ব্রাঞ্চের সহকর্মী আরিফ ভাইকে কল করলাম যিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় থাকেন। আরিফ ভাই বললো কালিগঞ্জ আসতে এরপর দুইজন একসাথে ঘুরবো।
হোটেল থেকে বের হয়ে নাস্তা করে চলে গেলাম পালবাড়ী মোড়। সেখান থেকে রুপসা বাসে করে কালিগঞ্জ পৌঁছলাম, ভাড়া ৪০ টাকা। কালিগঞ্জ যেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরই আরিফ ভাইয়ের সাথে দেখা। আমার প্ল্যান ছিল কালীগঞ্জের ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহ যেমন: বারবাজার মসজিদ, নলডাঙ্গার মন্দির, মল্লিকপুরের বটবৃক্ষ সমূহ ঘুরে দেখার। কিন্তু আরিফ ভাই আগে থেকেই প্রাইভেটকার রেডি করে রেখেছিল শৈলকুপার গাছবাড়ি নামক একটি স্পট ঘুরানোর জন্য। তাই রওনা দিলাম শৈলকুপার উদ্দেশ্যে। চলার পথে রাস্তার দুই পাশের গাছপালাগুলো দেখতে ভালই লাগছিল। মোটামুটি ঘন্টাখানেক জার্নি করার পর পৌঁছলাম শৈলকুপা, কিন্তু গাছবাড়ি নামক স্পটটি এলাকার তেমন কেউ চেনে না। অনেকটা সময় চলে গেল গাছবাড়ি যাওয়ার ডিরেকশন যোগাড় করতে। শৈলকুপা প্রধান সড়ক হতে গ্রামের ভেতরে আঁকা-বাঁকা ও কাঁচা কিছু সড়ক পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম গাছবাড়ি নামক স্পটে। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ। শুক্রবার এই স্পটটি বন্ধ থাকে। প্রধান ফটক দিয়ে গাছবাড়ির কিছু অংশ দেখা যায়। অনেক প্রজাতির গাছ দিয়ে একটি বাগানের সৃষ্টি এবং একটি ভবন যা পুরোটা ঘাসজাতীয় লতাপাতা দিয়ে ঢাকা। আমার কাছে তেমন আহামরি কিছু মনে হলো না।
আরিফ ভাই অনেক আশা করে স্পটটি দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি এবং আরিফ ভাই উভয়ই হতাশ হলাম। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে রওনা হলাম ঝিনাইদহ শহরের উদ্দেশ্যে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা চলে গেলাম শহরের মধ্যে অবস্থিত ঐতিহাসিক মিয়ার দালান দেখতে।
মিয়ার দালান: মিয়ার দালান ঝিনাইদহ শহরের সব থেকে প্রাচীন বাড়ি যা ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর থেকে প্রায় ২.৫ কিমি দূরের মরারীদহ গ্রামে অবস্থিত। বাড়িটি নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। লোকমুখে শোনা যায় বাংলা ১২২৩ সালে শুরু হয়ে ১২৩৬ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। বাড়িটির দেয়াল অসম্ভব রকমের পুরু এবং কোন রড ছাড়াই ইট আর চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত। বর্তমানে জরাজীর্ণ বাড়িটির নির্মাণশৈলী সত্যিই মনমুগ্ধকর।
মিয়ার দালান দেখে এবার আমরা রওনা করলাম বিশ্ববিখ্যাত গণিতবিদ কে পি বসু বাড়ি দেখতে।


কে পি বসুর বাড়ি: কালিপদ বসু সংক্ষেপে কেপি বসু একজন প্রখ্যাত বাঙালি গণিতবিদ ছিলেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের এই আদি বাড়িতেই বাস করতেন কেপি বসু। বাড়িটি এখনো বসবাসযোগ্য অবস্থায় আছে।


ঘুরাঘুরি করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো, এবার ফেরার পালা। ফেরার পথে হাটগোপালপুর নামক জায়গায় দেখা হলো ঝিনাইদহ ব্রাঞ্চের সহকর্মী কবির ভাইয়ের সাথে। সেখানেই রসমালাই আর ছানা দিয়ে কবির ভাইয়ের আতিথেয়তা গ্রহণ করতে হল। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে কবির ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম কালিগঞ্জ। কালীগঞ্জে আমার সফরসঙ্গী আরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যশোরের পথে রওনা করলাম। রাত আটটায় যশোর পৌঁছে আমার ঝিনাইদহ ভ্রমণের ইতি টানলাম।
আগামীকাল শনিবার ঘুরতে যাব মাগুরা জেলায়। তাই শরীর খুবই ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও মনটা ছিল চনমনে। আমার সাথেই থাকুন। পরবর্তী পোস্টে আমার সাথে মাগুরা ভ্রমণের আমন্ত্রণ রইল।