দুপুর ১টার দিকে আমরা সাজেকে পৌছি। সাজেক জার্নিতে শাকিল, জুয়েল এবং শ্রাবণ এর সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠেছিল বেশ। সেই সুবাদে আমি ওদের সাথে একসাথে রিসোর্টে থাকার জন্য অনুরোধ করি এবং ওরাও আমাকে ওদের সাথে থাকার সুযোগ দেয়। আমরা একটি রিসোর্টে উঠি। ১,০০০/- টাকা প্রতি দিন হিসেবে। রুমে ২টি ডাবল বেড, সাথে বেলকনি। রুম থেকে বাইরের প্রকৃতি দেখা যায়, সুন্দর ভিউ।
রুমে এসে সবাই গোসল করে রেডি হয়ে যাই দুপুরের খাবার খেতে। তখন দুপুর ২টা, আকাশে ঝলমলে রোদ। মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে রেস্টুরেন্টের বাইরে বসা মাত্রই আবহাওয়ার পরিবর্তন। হঠাৎ ঘন মেঘে ছেয়ে যায় চারিপাশ এবং ৫-৭ মিনিটের মত কিছুক্ষণ বৃষ্টিও হয়।
বৃষ্টি শেষে আসাদ ভাই তাদের রিসোর্ট মেঘপুঞ্জি তে আমাদের ইনভাইট করে। আমরাও সাথে সাথে হানা দেই। অসম্ভব সুন্দর মেঘপুঞ্জি কটেজ। রুমের বাইরের ভিউটা অসাধারণ ছিল। সেখানে সবাই যে যার মত ফটোসেশনে ব্যস্ত হয়ে যাই। ছবি তোলা আর আড্ডা দিতে দিতে বিকেল ৪টা বেজে যায়। এবার আমাদের যাত্রা কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। কংলাক পাহাড় সাজেকের হেলিপ্যাড থেকে বেশি উঁচুতে নয়। হালকা ট্রেকিং করেই পৌঁছে যাই আমরা কংলাক পাহাড়ে। কংলাক পাহাড়ের আশপাশের প্রকৃতি ছিল দেখার মতো, চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। কংলাক পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত দেখার ভিউ টাও জোস ছিল।
সূর্যাস্ত দেখে সাবধানে আমরা কংলাক পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসি এবং আমাদের কটেজে চলে যাই। রুমে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাত ৮টার দিকে আমরা খেতে যাই। খাবারের মেনু ছিল পরোটা আর চিকেন ফ্রাই। খাওয়া শেষে ক্লিনটন ভাইয়ের সাথে দীর্ঘ সময় আড্ডা দিয়ে মধ্য রাতে ঘুমাতে যাই। মধ্যরাতের সাজেকের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করার অভিজ্ঞতা দারুন ছিল।
সকালে খুব ভোরে উঠার প্লান থাকলেও মধ্যরাতে ঘুমানোর কারণে উঠতে দেরি হয়ে যায়। উঠেই ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেই। কারণ সকাল ১০টার ইস্কোর্টৈ আমরা খাগড়াছড়ি ফিরে যাব।
সকালে নাস্তা করে সবাই আমরা আমাদের জিপের কাছে ফিরে আসি। এক রাতেই ক্লিনটন ভাই আমাদের আপন করে নিয়েছিল, ক্লিনটন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবারও সাজেকের আকাবাকা পথ বেয়ে আমরা খাগড়াছড়ি ফিরে আসি। জীপের ছাদে বসে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা জার্নিটা দারুণ উপভোগ্য ছিল।
দুপুর ২ টায় আমরা খাগড়াছড়ি পৌঁছাই। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা রওনা দেই আলুটিলা গুহার উদ্দেশ্যে। আলুটিলা গুহায় ঢুকতে ১০ টাকার টিকিট কাটতে হয় এবং গেটের পাশেই মশাল বিক্রি করে। আমরা টিকিট কেটে মশাল ছাড়াই আলুটিলা গুহায় প্রবেশ করি। গুহার এক পথ দিয়ে ঢুকে অন্য পথ দিয়ে বের হতে হয়, ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
আলুটিলা গুহা ঘুরে আমরা গিয়েছিলাম খাগড়াছড়ি ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে। পার্কে ঢুকার টিকিট ২০ টাকা। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটিয়ে টুরমেটদের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে আমরা খাগড়াছড়ি শহরে ফিরে আসি এবং রাত ৯টার বাসের টিকেট কাটি। বাস ছাড়ার আগ পর্যন্ত একটি রেস্টুরেন্টে শাকিল, জুয়েল, শ্রাবণ এবং আমি আড্ডা দিয়ে সময় পার করি এবং একই বাসে করে ঢাকায় ফিরে আসি।
এভাবেই দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল আমার জীবনের প্রথম সলো ট্রাভেলিং এর ৩ রাত ২ দিনের সফর। বাসা থেকে বের হয়েছিলাম একা কিন্তু বাসায় ফিরেছি অনেকের সাথে পরিচিত হয়ে এবং অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি সাথে করে নিয়ে যা আমার সারা জীবনের বেঁচে থাকার রসদ হিসেবে কাজ করবে।